পথে নামলে পথই পথ দেখায়

Image may contain: outdoor and nature
কথাটা খুব সুন্দর তাইনা। কিন্তু প্রথমে যখন এই কথাটা শুনি। আমার কাছে ভালো লেগেছিল,কেমন যেন একটা ছন্দ ছন্দ ভাব আছে,কিন্তু এর মর্ম তখন বুঝিনি। এখনও পুরোটা না বুঝলেও কিছুটা হয়তো বুঝেছি। যা আজ শেয়ার করবো।
পথে নামলে পথই পথ দেখায়। এই কথাটা ভারি হলেও এর মজার উদাহরণ পেলাম মালিবাগ গিয়ে।
মালিবাগ চৌধুরীপারায় আমি একটা প্রোগ্রামে গেলাম। সেই প্রোগ্রামের নিয়ম হলো সকাল ৮:৩০ থেকে বিকেল ৩:৩০ মিনিট পর্যন্ত মৌন থাকতে হবে। কিন্তু দুপুরে জুম্মার নামাজ পড়ার জন্যে রাস্তায় বের হবো। তখন চিন্তায় পড়লাম,আমিতো কথা বলতে পারবো না,তাহলে রাস্তার মানুষকে কিভাবে জিজ্ঞেস করবো,মসজিদ কোথায়?
যাই হোক,নামলাম পথে। পথই আমাকে পথ ঠিকই দেখালো। রাস্তায় নেমে দেখলাম,কিছুক্ষন পর জুম্মার নামাজ হবে,তাই অনেকেই টুপি পাঞ্জাবী পড়ে যাচ্ছে। বুঝতেই পারলাম মসজিদে যাচ্ছে। ওদের ফলো করে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে আসলাম প্রোগ্রামে।
পথে নামলে পথই পথ দেখায়। এই বাক্যটার মর্মার্থ বুঝাতে আমাকে আরেকটা বাক্যের উল্লেখ করতে হচ্ছে,সেটা হচ্ছে,"যেখানে আছেন সেখান থেকেই শুরু করুন। যা আছে তা নিয়েই শুরু করুন।"
এখানে কিন্তু জিরো থেকে শুরুর একটা ইঙ্গিত আছে।
আমরা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়ে দেখেছি। যার যা ছিল, তাই-ই নিয়ে সুসজ্জিত পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছি। আমরা যদি ভাবতাম ট্যাংক আসুক। গোলা বারুদ আসুক। এরপর যুদ্ধ করবো। তাহলে কি হতো, যুগ পার হয়ে যেত,যুদ্ধে বিজয়ী হতাম না। কিন্তু যা আছে,
তাই নিয়ে শুরু করেছিলাম বলে মাত্র নয় মাসে বিজয়ী হতে পেরেছি।
যা আছে তাই-ই নিয়ে শুরু করতে হলে আমাদের কি করতে হবে? পথে নামতে হবে। পথে নামলে আপনি পারিপার্শ্বিক প্রভাবে তথ্য পাবেন,যা আপনাকে এগিয়ে নেবে।
ধরুন,আপনি গাড়ি করে বন্ধুর বাসায় যাচ্ছেন। হঠাৎ এক গলির মুখে এসে ড্রাইভার বললো, "স্যার,রাস্তার অবস্থা খারাপ। বাকি পথ হেটে যেতে হবে।" আপনি জানালা দিয়ে দেখে মনে হলো, এই পথ দিয়ে হেটে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু বন্ধুর বাসায় যেতে হবেই। বাধ্য হয়ে আপনি গাড়ি থেকে পথে নামলেন। নেমেই দেখলেন,অনেক পায়ের ছাপ,যা দেখে বুঝলেন,এই পথ দিয়ে অনেকে যেতে পেরেছে যখন,আমিও পারব। আপনি এগুলেন। আপনার চোখে পড়লো, কাদার মধ্যে জায়গায় জায়গায় ইটা দেয়া। আপনি এই পথে হাটার উপায় পেয়ে গেলেন। ইটার উপর দিয়ে সাবধানে হেটে হেটে পৌছে গেলেন বন্ধুর বাসায়। গাড়ি থেকে পথে নেমেছিলেন বলেই আপনাকে পথই পথ দেখালো।
এখানে দুটো পয়েন্টস নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। একটি হচ্ছে "পথ" অন্যটি "পথে নামা"।
পথ কি? পথ মানে কি শুধুই রাস্তা? ফুটপাত? রাজপথ?
আমি মনে করি,পথ হতে পারে একটা স্বপ্ন। হতে পারে ইচ্ছে, হতে পারে আইডিয়া। আসলে একেক জনের কাছে পথের সংজ্ঞা একেকভাবে ধরা দিতে পারে।
কিন্তু "পথে নামাটা" এর মানে কি? পথে নামাটা হচ্ছে,সেই স্বপ্ন,সেই ইচ্ছে,সেই আইডিয়া বাস্তবায়নের প্রসেসে প্রবেশ করা।
যারা আমার মতো বিজ্ঞান অল্পসল্প জানেন, তারাও জানেন শক্তি দুধরনের Potential Energy & Kynatic Energy.
যে বস্তুর ভিতরে শক্তিটা সম্ভাব্য হিসেবে আছে, সেটা পটেনশিয়াল শক্তি।
কিন্তু যখনই সেই শক্তিকে কাজে রুপান্তরিত করবো, তখনই সেই শক্তিটা হচ্ছে কায়নেটিক এনার্জি।
ধরুন আপনার সামনে কাচ্চি বিরিয়ানি আছে। যতক্ষন পর্যন্ত বিরিয়ানি না খাচ্ছেন, ততক্ষন এই বিরিয়ানিটা পটেনশিয়াল এনার্জি। যেমন, এই বিরিয়ানি এর সম্ভাব্য শক্তি হচ্ছে,এটা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে, এটা তৃপ্তি দিতে পারে, এটা আপনার শরীরে ফ্যাট জমাতে পারে।
কিন্তু কেউ যখন এই বিরিয়ানি না খায়,এটা ডাস্টবিনে চলে যাবে। এর সম্ভাব্য শক্তি কোনও কাজেই আসলো না।
কিন্তু যখনই আপনি বিরিয়ানিটা খাচ্ছেন, তখন পটেনশিয়াল শক্তিটা রুপান্তরিত হচ্ছে কায়নেটিক এনার্জিতে। বিরিয়ানির সম্ভাব্য শক্তি আপনার ক্ষুধা নিবারন করছে, আপনাকে তৃপ্তি দিচ্ছে। এর তৈলাক্ত অংশগুলো বার্ন হওয়ার জন্যে বসে আছে। যখনই দেখবে বার্ন হচ্ছেনা, তখনই শরীর সেই তৈলাক্ত অংশগুলোকে ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে চর্বি বানিয়ে ফেলবে।
আপনি যখন খাবারটা মুখে নিলেন, পরবর্তী কি কি কাজ করবেন,সেই পথ কিন্তু পেয়ে যাচ্ছেন। যেমন, মুখে এলাচি পড়লো, আপনি এলাচি ফেলার ব্যবস্থা করলেন। ঝাল লাগলো পানি খেলেন।
অর্থাৎ শক্তিটাকে কিভাবে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানো যায়,সেই তথ্যগুলো আপনি একে একে পেতে থাকবেন,শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রসেস শুরুর পরপরই।
এখন বলতে পারি, "পথ" হচ্ছে পটেনশিয়াল এনার্জি। "পথ" হচ্ছে স্বপ্ন, ইচ্ছে,সম্ভাবনা। পথ হচ্ছে,এই কাজ গুলো করার সম্ভাবনা আমার আছে, আমি পারি, আমি পারব।
হ্যা আপনি পারেন। তবে পারি বলেই বসে থাকলে হবেনা। আপনাকে এখন "করার' প্রসেসে ঢুকতে হবে। আপনাকে এখন পথে নামতে হবে, অর্থাৎ আপনার পটেনশিয়াল এনার্জিকে কাইনেটিক এনার্জিতে রুপান্তর করতে হবে। তাহলেই আপনি একেরপর এক তথ্য পাবেন, যা আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
তবে এরজন্যে আপনাকে আরোও দুটো কাজ করতে হবে।
নিয়মিত মেডিটেশন করতে হবে এবং সৎসঙ্ঘে একাত্ম থাকতে হবে।
আপনি যদি নিয়মিত মেডিটেশন করেন,আপনার মাথা ঠান্ডা থাকবে,আপনি খুব সহজেই সঠিক এবং ভুল তথ্য সনাক্ত করতে পারবেন।
সৎসঙ্ঘে একাত্ম থাকলে,আপনি প্রতিনিয়ত রহমতের মধ্যে থাকবেন। আপনি যেকোন সৎ পরামর্শ অনায়াসে পাবেন। আর যদি কেউ পরামর্শ দিতে নাও পারে,ভিতর থেকে তারা আপনার জন্যে দোয়া করবে। দোয়াটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, শক্তিশালী বিষয়। কারন যার কাছে দোয়া চাওয়া হচ্ছে, তিনি কিন্তু মহাশক্তিমান। সেই মহাশক্তিমান স্রস্টা, আপনার ব্রেনে এমন তথ্য পাঠাতে পারে যা দিয়ে আপনি শুধুই নিজেকে না,পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে পারেন।
ধন্যবাদ।
তাজুল ইসলাম মাসুদ,
৬ অক্টোবর, ২০১৬,
ঢাকা, বাংলাদেশ।

Comments

Popular posts from this blog

ক্যারিয়ার বান্ধব মেডিটেশন মনছবি

মাওলানা ছায়ীদুল হকের আরেকটি পরিচয়