সমাজ পূজা

Image result for নমস্কার

ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে স্রস্টায় সমর্পন। অর্থাৎ কোন লোভ লালসা কামনা বাসনার বশবর্তী না হয়ে, শুধু স্রস্টার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে প্রতিটি কাজ করা। ধর্মে স্রস্টার সাথে কাউকে অংশীদার ভাবা,সেই অংশীদারের পুজো করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবে আমরা কি করছি, স্রস্টায় সন্তুষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে,সমাজ পুজো করে যাচ্ছি। স্রস্টায় কিসে সন্তুষ্ট সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। সমাজ কিসে সন্তুষ্ট, কি করলে সমাজের কাছ থেকে বাহবা পাওয়া যাবে, আমরা সেটাই আমাদের কাছে মুল বিষয় হয়ে দাড়ায়।
কিন্তু সমাজ পুজোর এই রুপ হতে পারে মর্মান্তিক।
একটি অজপাড়া গায়ে এক বৃদ্ধা মারা গেলেন। তার ছিল অনেক নাতি নাতনি।
এই বৃদ্ধার যখন কুলখানি হয়। তখন আর আত্মীয়স্বজনরা টাকার প্রতিযোগিতায় নামে,কে কত টাকা ঢালতে পারে। একজন অনেক টাকা দিচ্ছে, সে বাহবা পাচ্ছে, তার বাহবাকে ম্লান করতে আরেকজন আরও টাকা দিচ্ছে। সবশেষে কি হলো , কুলখানির প্রোগ্রাম হলো দুদুটো। অথচ এই বৃদ্ধা যখন জীবিত ছিল ঠিকমতো খেতেও পায়নি। সে ছিল সকলের গলার কাটা। কারোও বাচ্চা হলে এই বৃদ্ধা যেত। সারারাত বাচ্চাটার দেখাশুনা করতো। কিন্তু উনি যখন বিছানায় পড়লেন। উনার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল। কেউ-ই তাকে নিজ বাসায় রাখতে চাইলো না। সবাই যেন অপেক্ষা করতে লাগলো কবে মরে,কবে ঝামেলা শেষ হয়। টাকা পয়সার অভাবে তার খাবারদাবার, তার চিকিৎসা সীমিত হয়ে হয়ে আসে। অবশ্য তার এক নাতনি টাকা দিত, অথচ সেই নাততির অন্য বোনেরা টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করতো, সেই সাথে বলতো, "মোর এক বুইনে ট্যাকা দেয়, মুই দিমু ক্যান?" মানে তাদের কথা শুনে মনে হত, তার বোনের সওয়াবের ভাগ, আল্লাহ যেন তাদের জন্যে রেডি করে রেখেছেন। যে মানুষটা জীবিত থাকতে সবাই টাকার হিসেব করতো, তার মৃত্যুর পর শুরু হলো কুলখানির নামে ধুমধড়ক্কা প্রোগ্রাম।
দুদুটো প্রোগ্রাম। আসলে ওটা কুলখানি ছিল নাকি গেটটুগেদার প্রোগ্রাম ছিল বলা মুশকিল।
এই ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে প্রচুর দেখা যায়। অনেক বাবা-মা আছেন, যারা সন্তানের কাছে টাকা চাইলে টাকাতো পায়ই না, ঊল্টো কটু কথা শুনতে হয়। মানুষ বয়স্ক হলে সেকেন্ড চাইল্ডহুডে চলে যায়। তখন তারা কেউকেউ বাচ্চাদের মতো আচরন করেন, কিন্তু আমরা সন্তানেরা সেটাকে মাফ করিনা, অপমান করি।
অথচ এই মা-বাবার গুরুত্ব বেড়ে যায় তাদের মৃত্যুর পর। মারা গেলে কেদে চোখফুলাই। হুজুরকে টাকা দিয়ে বলি, আমার বাবার লইগা দোয়া কইরেন। এতিম খাওয়াই, মোজাইক করে কবর বাধাই করি। কিন্তু হলে কি হবে, এই মানুষটা পৃথিবীতে যে চোখের পানি ফেলে গেছে, সেই পানির জন্যে আপনাকে চরম মুল্য দিতেই হবে।
তবে আমাদের অতি আপনজন যদি মারা যায়,তাহলে খরচ করতে হলে আমাদের এমন জায়গায় খরচ করতে হবে,যাতে করে সাদকায়ে জাড়িয়া হিসেবে,সেই মৃত ব্যাক্তির আমলনামায় জমা হতে থাকে। যেমন আপনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিউবওয়েল বসাতে পারেন। এই টিউবওয়েল থেকে যতদিন মানুষ সেবা পাবে,তত সওয়াব মৃত মানুষ পেতে থাকবে। আল-কোরয়ানের মর্মাবানী বিতরন করতে পারেন। এই মর্মাবানী পড়ে কেউ যদি বিশ্বাসী হয়ে সৎকর্ম করে যায়,কেউ যদি উপকার পায়,অবশ্যই সেই সওয়াব সেই মৃতব্যক্তি পাবেন।
আমাদের দেশের নামকরা কিউট কসমেটিক্স আমরা সবাই চিনি। সেই কিউট কসমেটিক এর মৌসুমি গ্রুপ এর চেয়ারম্যান কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ যখন মারা যান, তখন তার পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিলেন,সাড়ে তিনহাজার লোককে তারা খাওয়াবেননা, তাদের আল-কোরয়ান বাংলা মর্মাবানী বিতরন করবেন কারন খাওয়ালে জৈবিক ক্ষুধা মিটবে। কিছুক্ষন পর সেটা টয়লেটে চলে যাবে। ওনারা মর্মাবানী বিতরন করলেন এবং প্রতিবছর তারা এই কাজটা করে আসছেন।
আমরাও এই কাজটা করতে পারি।
কিন্তু আমরা অধিকাংশ এই ধরনের সদকায়ে জারিয়ার কাজ করছিনা। কারন ঐযে সমাজ পুজা। নিকট আত্মীয় মারা গেলে ধার দেনা কর্জ জমানো টাকা খরচা করে প্রোগ্রাম করি। কারন না করলে সমাজ কি কইবো?
যারা খেতে আসে তাদের ৯৯% কিন্তু বাসায় ভালো খেতে পায়। তারা খেতে আসে। খায়। বাসায় গিয়ে বদনাম করে। খাবার নিয়ে অশ্লীল বদনামও করতেও এদের বুক কাপেনা, "এইসব কি খাইতে দিছে,Baal Sool খাইতে দিছে।" অর্থাৎ এমনভাবে কথা বলে,যেন তারা নবাব সলিমউল্লাহ এর শেষ বংশধর। এসব খাবারে তারা অভ্যস্থ না।
একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন। এই সমাজপুজো করে। সামাজিক অবিদ্যার জন্যে পয়সা খরচ করে,আপনি কখনই ভালো থাকতে পারবেন না।
কিন্তু আপনি স্রস্টায় সন্তুস্টি অর্জনের জন্যে কাজ করে যান। যেখানে খরচ করলে মানুষের প্রকৃত কল্যান হবে, সেখানেই খরচ করুন। বাহবা পাবার প্রত্যাশা বাদ দিয়ে,শুধু স্রস্টায় সন্তুস্টি অর্জনের জন্যে কাজ করুন। পরকালে কল্যানতো পাবেনই, এই দুনিয়াতেও আপনি পাবেন, অফুরন্ত কল্যান।
ধন্যবাদ।
----------------------
তাজুল ইসলাম মাসুদ,
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬

Comments

Popular posts from this blog

পথে নামলে পথই পথ দেখায়

মাওলানা ছায়ীদুল হকের আরেকটি পরিচয়

ক্যারিয়ার বান্ধব মেডিটেশন মনছবি