আমার মস্তিষ্ক আমার বিশ্বস্ত বন্ধু

(এক)
প্রথমেই একটি খুব পরিচিত গল্প দিয়েই শুরু করি।
এক জঙ্গলে একজন যুবক আর এক ভালুকের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হলো। দুজনেই দুজনের খেয়াল রাখে। কিন্তু ভালুক যতই ভালো হোকনা কেন,যতই শক্তিশালী হোকনা কেন, সে ছিলো বোকা। ভীষণ বোকা। যুবক এবং ভাল্লুক একবার জঙ্গলের পথ দিয়ে অনেক হাটছিলো। যুবক ক্লান্ত হয়ে ভাল্লুককে বলল, বন্ধু আমি খুব ক্লান্ত, আমি ঘুমুচ্ছি। তুমি একটু খেয়াল রেখো।
বলেই যুবক ঘুমিয়ে পড়লো। ভাল্লুক বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো খেয়াল রাখছে। হঠাৎ দেখলো একটি মাছি তার ঘুমন্ত বন্ধুকে খুব জ্বালাচ্ছে। ভাল্লুক ঠিক করলো, যেভাবেই হোক মাছিটার একটা দফারফা করতেই হবে। নইলে বন্ধু শান্তিতে ঘুমুতেই পারবেনা। সে কি করলো, মাছিটাকে মারার জন্যে ইয়া বিশাল খুব ভারী এক পাথর নিয়ে এলো।
ভালুক এসে দেখলো মাছিটা বন্ধুর কপালে বসে আছে। সে মাছিকে মারার উদ্যেশ্যে পাথরটা বন্ধুর কপাল বরাবর সর্বশক্তি দিয়ে ছুড়ে মরলো। মাছি মরলো কিনা জানিনা। তবে ভাল্লুকের বোকামির কারনে বন্ধু মাথা থেঁতলে মারা গেলো।
এই গল্পের পাদটীকা কি আমরা এভাবে বলতে পারিনা, "বোকা বন্ধু সর্বনাশের কারন হতে পারে।" অবশ্য এটা আমাদের আজকের আলোচনার টপিক নয়। এই গল্প প্রসঙ্গে পরে আসছি।
আমি তাজুল ইসলাম মাসুদ, একজন উদ্যেক্তা। টাইম ২০২৫ এর প্রতিষ্ঠাতা, আশাকরি আমার লেখাটা আপনারা উপভোগ করবেন এবং উপকৃত হবেন। আমি এবার চলে আসি আমাদের মুল টপিকে, আজকের টপিক "আমার মস্তিস্কই আমার বিশ্বস্ত বন্ধু"।
মস্তিষ্ক এমন এক সুপার সুপার জৈব কম্পিউটার। যা সভ্যতাকে বদলে দিলেও, বদলাতে পারছেনা আপনাকে।
মানব মস্তিষ্ক যে কি পরিমাণ শক্তিশালী তার সাক্ষী ইতিহাস।
মানুষ হচ্ছে অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল, সে বানরের মত দ্রুত গাছে উঠতে পারেনা। চিতার মতো দ্রুত দৌড়াতে পারেনা। মাছের মত দ্রুত সাতারও কাটতে পারেনা। এই মানবজাতির তো টিকে থাকারই কথা নয়। অথচ এই মানবজাতি শুধু টিকেই থাকেনি। নিজেদের সেরা প্রমাণ করে দখল নিয়েছে পৃথিবীর। আজ সেই মানষই সার্কাসে ব্যবহার করছে তারই চেয়ে কয়েকগুণ শারীরিক শক্তিশালী বাঘ হাতিকে।
কেন? কারন মানুষের এই বিজয়ের কারন মানব মস্তিষ্ক। সেই পাথর থেকে আগুন জ্বালানো থেকে শুরু করে, সুপার কম্পিউটার বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে এই মস্তিষ্ক। তারা এমনও কম্পিউটার তৈরি করছে, যা কিছু ক্ষেত্রে মানুষকেই পরাজিত করে। IBM (International Business Machine) এর তৈরিকৃত সুপার কম্পিউটার ডিপ ব্লু যখন টুর্নামেন্ট এ পরাজিত করে তখনকার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন গ্রান্ড মাস্টার গ্যারি কাসপারভকে। তখন বিশ্ব অবাক হয়ে যায়, একি হলো? কম্পিউটার এর কাছে মানুষের পরাজয়। [*1]
১৯৯৭ এ যন্ত্রটি তৎকালীন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গ্যারী কাসপারভের বিরুদ্ধে ছয়টি দাবা খেলায় অংশ নেয়। তন্মধ্যে যন্ত্রটি দু'টিতে জয়, তিনটিতে ড্র এবং একটিতে পরাজিত হয়। [*2]
অনেকেই মানুষের কম্পিউটার এর কাছে দাবায় পরাজয়কে নেতিবাচক হিসেবে দেখলেও এপ্রসঙ্গে বিল গেটস বলেছেন, "মানুষের তৈরি কম্পিউটারের কাছে মানুষ দাবায় পরাজিত হয়েছে। এখানে কিন্তু মানুষেরই বিজয়।"
আসলে কম্পিউটার মানুষের চেয়েও দ্রুত হিসেব কষতে পারে, এই কারনেই দাবায় কম্পিউটার এর জয় হয়। আর পেশাদারি দাবা খেলায় সময় বেধে দেয়া থাকে।
মানুষের ব্রেন অনেক অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে আছে। মানুষের ব্রেন কম্পিউটারের চেয়ে বহু বহু গুন শক্তিশালী।
একসময়ের সুপার কম্পিউটার ক্রে ওয়ান।যার সাইজ ছিলো, এক রুম সমান। এখন সেই ক্রে ওয়ানের চেয়েও সুপার কম্পিউটার আমাদের পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সেটা হচ্ছে আমাদের স্মার্ট ফোন। এক সময়ের পাঁচ এমবি একটি মেমোরি কার্ডের সাইজ ছিলো, একটি স্টিলের আলমারির সমান। আর এখন ৩২ জিবির একটি মেমোরি কার্ড যদি ফ্লোরে পড়ে যায়, সেটা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। এই স্মার্ট ফোন, মেমোরি কার্ড এসব কিন্তু কম্পিউটার তৈরি করেনি। করেছে মানব মস্তিষ্ক।
পরমাণুকে শক্তিতে রুপান্তর করা থেকে মহাকাশে ভ্রমণ, চাঁদে পাফেলা, মঙ্গল গ্রহে পাথফাইন্ডার প্রেরণ সহ অনেক কাজ করে সভ্যতাকে আজ অনেক এগিয়ে নিচ্ছে এই মস্তিষ্ক। যত শক্তিশালীই কম্পিউটার হোক না কেন, তার মেমোরির একটা সীমা আছে। কিন্তু মানবমস্তিস্কের মেমোরির কোনই সীমা নেই।


Image result for brain


(দুই)
মস্তিষ্ক এত শক্তিশালী এর কারন কি? বিজ্ঞানীরা এটা নিয়ে গবেষণা করেও কুলকিনারা পাচ্ছেননা।
তবে পবিত্র কোরয়ান শরীফে সুরা বাকারায় একটা ঘটনা থেকে বুঝতে পারি মস্তিষ্ক কেন এত শক্তিশালী।
স্মরণ করো! যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন,আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি',তখন তারা বলল, 'আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্ট ও খুনখারাপি করবে? আমরাতো সর্বদাই আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণায় নিমগ্ন।' আল্লাহ জবাবে বললেন, 'আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না।'
আর তিনি আদমকে সবকিছুর নাম শিক্ষা দিলেন (অর্থাৎ সকল বিষয়ের জ্ঞান দান করলেন)। এরপর এক এক করে সবকিছু ফেরেশতাদের সামনে হাজির করে বললেন, "তোমরা এগুলোর নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।' তারা বলল, 'আপনি মহাপবিত্র। আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন, তার বাইরে আমরা কিছুই জানিনা। আপনি প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।'
তিনি বললেন, হে আদম! তাদেরকে এগুলোর নাম বলে দাও। তখন আদম সবকিছুর নাম বলে দিলেন।....
সুরা বাকারা আয়াত ৩০ থেকে ৩৩।
এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে মস্তিস্কের শক্তির আসল রহস্য।
আদম (আঃ) হচ্ছেন সর্বপ্রথম মানব। সেই হিসেবে আমাদের আদিপিতা। আল্লাহ আদম (আঃ) কে সবকিছুর নাম শিখিয়েছেন। অর্থাৎ তার মস্তিস্কে সবকিছুর জ্ঞান দেয়া হয়ে। এখন তার DNA সমগ্র মানুষের শরীরে আছে। আমাদের মস্তিস্কের গঠনপ্রণালী সেই রকমই হবে। অর্থাৎ আমাদের ব্রেনেও সেই জ্ঞান আছে। তবে আমরা যদি একটু চেষ্টা চালাই, তাহলে আমরা যেকোনও ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞদের ছাড়িয়ে যেতে পারব। আমাদের সবার ব্রেনেই কিন্তু উড়োজাহাজ তৈরির কৌশল লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু আমরা কেউই চেষ্টা করিনি। কিন্তু রাইট ভাইয়েরা অল্প শিক্ষিত হয়ে চেষ্টা করেছেন। সেই জ্ঞান অনেক সাধনার জাগ্রত হলো। তারা উড়োজাহাজ আবিষ্কার করলেন।
স্টিভ জবস একজন ড্রপ আউট ছিলেন। গ্রাজুয়েশনও কমপ্লিট করেননি। কিন্তু IBM এর বাঘা বাঘা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরা সহজ পার্সোনাল কম্পিউটার তৈরি করতে পারেনি। অথচ স্টিভ জবস Apple 2, Lisa, Macintosh, iPod, iPhone তৈরি করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো। এই প্রযুক্তির জ্ঞান আমাদের সবার ভিতরই ছিলো। তবে স্টিভ জবস নিয়মিত অনুশীলন, পরিশ্রম এবং আধ্যাত্মিক চর্চা দ্বারা সে এই জ্ঞানকে জাগ্রত করতে পেরেছেন। [*3]
শুধু তাইনা, আমরা ব্রেনের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রোগ নিরাময়ও করতে পারি। কারন আমাদের ব্রেন শক্তিশালী ঔষধও তৈরি করতে পারে।
আমরা বুঝতে পারছি ব্রেনের অনেক শক্তি, কিন্তু এত শক্তি থাকা সত্বেও আমরা কেন একে কাজে লাগাতে পারছিনা।
কারন হচ্ছে, আমাদের মস্তিস্কে অনবরত ভুল রেকর্ডিং।
আমাদের মস্তিস্কে রেকর্ডিং পাওয়ার আছে। সেই মায়ের গর্ভ থেকে এখন যা যা হচ্ছে, তা পঞ্চইন্দ্রিয়ের মাধ্যেমে আমাদের মস্তিস্কে রেকর্ড হয়েই যাচ্ছে। এবং সেইসব বছরের পর বছরের, যুগের পর যুগের বিশাল তথ্য আমাদের ব্রেনে সুপ্তভাবে সংরক্ষিত থাকে।
আমরা যখনই সিদ্ধান্ত নিতে চাই, তখন মস্তিষ্ক সেই তথ্যের আলোকেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগীতা করে।
আমরা অধিকাংশই বেড়ে উঠি নেতিবাচক অথবা ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির পরিমণ্ডলে। তাই আমাদের ব্রেনে নেতিবাচকতা জড়ো হতে হতে আমাদের ব্রেনের অবস্থা হয়ে যায় সেই বোকা ভাল্লুক এর মতো। যেই ভাল্লুকের গল্প আলোচনার প্রথমেই শুনেছিলেন। আমাদের ব্রেন বিশ্বস্ত বন্ধু হওয়া সত্বেও ভালো করতে গিয়ে ক্ষতি করে ফেলে আমাদের।
ধরুন আপনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আপনি আইটি সেক্টরে কিছু করবেন। হঠাৎ আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দিলো আপনার সিনিয়র বড় ভাইয়ের একটি নেতিবাচক কথা, "আরে আইটি সেক্টরে, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার রাই সুবিধা করতে পারছেনা। আমরা কোন ছাড়!"
ব্রেন কিন্তু সিনিয়র ভাইয়ের তথ্যকে সত্য হিসেবে নিয়ে, এখানে ব্রেন ভাবলো, আপনি আইটি প্রফেশন এ ভালো করতে পারবেননা। আপনি যেন অহেতুক কষ্ট না করেন, তাই সে সিনিয়র ভাইয়ের তথ্যটা আপনাকে মনে করিয়ে দিলো, যাতে আপনি পিছিয়ে আসেন।
অথচ আইটি সেক্টরে খুব দ্রুত চেঞ্জ হয়। আপনি ইঞ্জিনিয়ার, আপনার সার্টিফিকেট আছে। কিন্তু বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তিতে আপনি আপডেট নন। আপনি ভালো কাজ পারেননা। আপনার দাম নেই। অথচ একটা ছেলে অল্প শিক্ষিত সে ফটাফট আমার ওয়েব সলুশন করে দিলো। আমি সেই অল্প শিক্ষিত ছেলেকেই নেব। আপনার ব্রেনে যদি এই ইতিবাচক তথ্য থাকতো, তখন আপনার মস্তিষ্ক বোকা ভাল্লুকের মতো আপনার সর্বনাশ করতোনা।
(তিন)
হয়ত বলবেন। জনাব তাজুল ইসলাম মাসুদ, আপনি যা বলেছেন মানলাম। কিন্তু মস্তিষ্ককে কিভাবে আরও কাজে লাগাবো?
বলছি....
এখন আমার মস্তিস্কই যেন হয় আমার বিশ্বস্ত বন্ধু। একদম প্রকৃত বিশ্বস্ত বন্ধু। এরজন্যে আমাদের কি কি করতে হবে? অথবা কি কি করলে মস্তিষ্ককে চমৎকার ভাবে কাজে লাগানো যায়?
১) ইতিবাচকতা চর্চা।
মস্তিষ্ক যেহেতু প্রতিনিয়ত ইতিবাচক আর নেতিবাচক বিষয় রেকর্ড করেই যাচ্ছে। তাই আমাদের সচেতনভাবেই নিয়মিত ইতিবাচকতা চর্চা করে যেতে হবে। এতে ব্রেনের নেতিবাচক স্মৃতি কমজোর হয়ে পড়বে। ইতিবাচক চর্চার জন্যে সবসময় ইতিবাচক অটোসাজেশন দিয়ে যাব। অটোসাজেশন কি আপনারা অনেকেই জানেন। ফ্রান্সের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ডা. এমিল কোয়ে ১৯১০ সাল থেকে অটোসাজেশনের সফল পরীক্ষা করে সাড়া ফেলেছিলেন।
শুধু বিদেশেই নয়, আমাদের দেশে ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃৎ প্রফেসর এম উ আহমেদ ১৯৩৪ সালে প্রথমে নিজের উপর এরপর হাজার হাজার মানুষের উপর অটোসাজেশন প্রয়োগ করে মানুষকে উপকৃত করেছিলেন। আসলে প্রফেসর এম উ আহমেদ এর মতো গুনীজন খুবই কম জন্মগ্রহণ করে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।
আমাদের কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনেই "অটোসাজেশন" নামে একটি বই আছে, একাধিক কনিকা আছে। এমনকি "অটোসাজেশন" এর উপর এক সেট সিডি আছে। আপনারা আপনাদের সুবিধা অনুযায়ী আজই সংগ্রহ করে সম্ভব হলে আজই চর্চা শুরু করে দিন।
২) লক্ষ্য ঠিক করুন।
লক্ষ্য যদি একবার ঠিক করে ফেলেন, লক্ষ্যকে যদি মনছবি আকারে ব্রেনে গেঁথে ফেলতে পারেন, তাহলে আপনার ব্রেন দিবানিশি আপনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন এর জন্যে কাজ করে যেতে পারবে।
আসলে জীবনের লক্ষ্য একবার সেট হয়ে গেলে ব্রেন অনেকটা ইজি হয়ে যাবে। অপ্রয়োজনীয় তৎপরতা থেকে ব্রেনই আপনাকে দূরে রাখবে।
৩) নিয়মিত ভালো বই পড়ুন।
আমরা কেউ কেউ বই বলতেই বুঝি রহস্যউপন্যাস, প্রেমের উপন্যাস। এসব বই পড়ে সময় অপচয় করবেননা। ভালো বই পড়ুন। আলোকিত মানুষের জীবনী পড়ুন, ভালো প্রবন্ধ পড়ুন।
জ্ঞান দুই ধরনের দিমাগী জ্ঞান অর্থাৎ ব্রেনের জ্ঞান আর ক্বালবি জ্ঞান।
আমাদের যেহেতু অনেকেরই ক্বালবি জ্ঞান অর্জনের সুযোগ নেই। তাই আমাদের ব্রেনের জ্ঞান, ব্রেনের শক্তি বাড়ানোর জন্যে নিয়মিত বই পড়তে হবে।
আজ যারা পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। তারা কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও বই পড়েন।
ওয়ারেন বাফেট উনি কিন্তু নিয়মিত বই পড়েন।
বিখ্যাত টিভি ব্যাক্তিত্ব ওপেরা উনফ্রো উনি প্রতি মাসে একটা বই পড়েন।
আমরা কেউ কেউ ফেসবুকে সারাদিন বুদ হয়ে থাকি, প্রতিদিন পাচছয়টা পোস্ট দেই। অথচ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ উনাকে প্রতিমাসে দুতিনটা পোস্ট দিতে দেখা যায়না। কেউ কেউ পারলে প্রতিদান প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করে। অথচ মার্ক জুকারবার্গের প্রোফাইল পিকচার বছরেও চেঞ্জ হতে দেখা যায়না। সেই মার্ক জুকারবার্গ প্রতি দুসপ্তাহে একটা করে বই পড়েন।
বিল গেটস। প্রতি সপ্তাহে একটা করে বই পড়েন। বছরে ৫০ টা বই পড়েন। [*4]
ভ্রমণে দেরি হলে কখনও বিরক্ত হননা বুভুক্ষু পাঠক বিল গেটস। কারণ এতে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে কোথাও ভ্রমণে বের হলে প্রচুর বই সঙ্গে নেন তিনি।
বিল গেটস বইয়ের ব্যাপারে যে কত সিরিয়াস তা তার একটি উক্তি শুনলেই বোঝা যাবে। বিল গেটস বলেছেন, "আমার সন্তানের অবশ্যই কম্পিউটার থাকবে, তবে এর আগে থাকতে হবে বই।" [*5]
আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উনি বই পড়েন কিনা জানিনা। জানলে আমাদের একটু জানাবেন। :P
আপনারা নানাভাবে জোগাড় করে অথবা লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়তে পারেন।
আপনারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও সাথে বই নিয়ে যাবেন। আমি গ্রামের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি। গ্রাম অঞ্চলে, মফস্বলে নেতিবাচতা চর্চা তুলনামূলক একটু বেশি হয়। তাই সেখানে গেলে অহেতুক আড্ডায় সময় না দিয়ে বই পড়ুন।
সেই বইটিই আগে পড়বেন, যে বইতে আছে হাজার বছরের জ্ঞানের নির্যাস, এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা। যা খুব সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই বইটি হচ্ছে আল-কোরআন বাংলা মর্মবাণী। এই বইটি পড়ে শেষ করার পর আপনার ব্রেনের শক্তি যে কোন পর্যায়ে চলে যাবে, আপনি পড়ার পর বুঝতে পারবেন।
৪)মেডিটেশন।
মেডিটেশন করলে ব্রেন ঠাণ্ডা থাকে, মন প্রশান্ত থাকে। তখন ব্রেনকে চমৎকার কাজে লাগানো যায়। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করে আপনাদের আশেপাশের অনেককেই দেখবেন সাধারণ মেধা নিয়েও অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে।
এতক্ষণ লেখাটা পড়ার জন্যে আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ।
===============
Ref:
[*1] আমি ১৯৯৭ তে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন এর অনুর্ধ ১৬ এর সাব-জুনিয়র দাবা খেলোয়াড় ছিলাম। ওই সময়ের তোলপাড় করা ঘটনাটি আমার স্মৃতি থেকে নেয়া। তারপরও আমি উইকিপিডিয়া চেক করে দেখেছি। আপনারাও চেক করে দেখতে পারেন। উইকিপিডিয়াতে গিয়ে Deep Blue লিখে সার্চ দিলেই পাবেন।
[*2] উইকিপিডিয়া।
[*3] (Biography Book) Steve Jobs By Walter Isaacson এই মুল গ্রন্থের বিভিন্ন চ্যাপ্টার ঘেটে নেয়া।
[*4] (Video Lecture) Formula on financial stability compounding growth By Dr. Vivek Bindra.
[*5] (জীবনী গ্রন্থ) বিল গেটস, দ্যা গ্রেটেস্ট এনট্র‍্যাপ্রেনার অব সফটওয়্যার, মুল: জ্যানেট লো। অনুবাদ: শরিফুল ইসলাম ভূইয়া। সময় প্রকাশনী। ১৩৩ নং পৃষ্ঠা থেকে নেয়া।
=============
তাজুল ইসলাম মাসুদ,
ঢাকা, বাংলাদেশ।
২৮ শে আগস্ট,২০১৭.

Comments

Popular posts from this blog

পথে নামলে পথই পথ দেখায়

মাওলানা ছায়ীদুল হকের আরেকটি পরিচয়

ক্যারিয়ার বান্ধব মেডিটেশন মনছবি